খাবার কে অনেক দিন ভালো রাখার জন্য সচরাচর রেফ্রিজারেটর বা ফ্রিজ ব্যবহার করে থাকি আমরা। কিন্তু ভাবেন তো এমন একটা শহর যেখানে প্রকৃতি প্রদত্তই খাবার ফ্রোজেন হচ্ছে।মজার না ব্যাপার টা?  

আপনি যদি ভেবে থাকেন যে এটি খুবই উপকারি যেহেতু ফ্রিজ ব্যবহার করতে হচ্ছে না সেহেতু কোনো ইলেক্ট্রিসিটির ও দরকার হচ্ছে না। আর কোনো বিল তো  দেয়া লাগছেই না, তাহলে আপনি ভুল ভাবছেন।       

পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন আবহাওয়ার পরিবেশ রয়েছে। যেমন এন্টার্কটিকায় যেরকম ঠান্ডা আবহাওয়া ঠিক তার বিপরীত অবস্থানে রয়েছে মধ্য প্রাচ্যের দেশ গুলো। তেমনি ব্যাতিক্রম রয়েছে এমন এক ঠান্ডা শহরের তাপমাত্রার, যেখানে এতোটাই ঠান্ডা পড়ে যে সেখানে কোনো মাছ কিংবা মাংস সংরক্ষণ করতে রেফ্রিজারেটরের দরকার পড়ে না।

রাশিয়া মহাদেশে অবস্থিত একটা দেশ সাইবেরিয়া।  আবার সাইবেরিয়ার সাখারাজ্যের একটি শহর যেটির নাম হচ্ছে ইয়াকুতা। এটি এমন একটি শহর যেখানে দিনে গড়ে ৩ ঘন্টার জন্যে সূর্যের দেখা পাওয়া যায়।

তার থেকে বড় কথা হচ্ছে এখানকার মানুষ -৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা পর্যন্ত  আবহাওয়া কে স্বাভাবিক মনে করে যেখানে আমাদের দেশের মানুষ ১০ কিংবা ১২ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রাতেই অভ্যস্ত নন। 

এই শহরের ব্যাপারে আরো কয়েকটি মজার ব্যাপার হচ্ছে এখানকার যে ভূমি বা মাটি সেগুলো ওনারা কয়েক হাজার বা শত বছর পূর্বে সংরক্ষণ করে রেখেছেন যেগুলো আজ পর্যন্ত ফ্রোজেন হয়ে আছে কেননা ইয়াকুতায় এতো বেশি ঠান্ডা আর বরফ এর প্রচ্ছেদ যে সেখানে মাটি পর্যন্ত পোঁছানো সম্ভব নয়। এছাড়াও মাটির নিচের পানিও পান করতে পারে না কেননা সেগুলো নিষ্কাশনের কোনো উপায় নেই। মাটির নিচে সেগুলো ফ্রোজেন হয়ে আছে। তাই এখানকার মানুষ নদীর পানি প্রসেসিং করে পান করে থাকেন। তবে তারা নদী থেকে সরাসরি বরফ সংগ্রহ করে সেগুলো একটা বদ্ধ স্থানে রাখে গলে পানি না হওয়া পর্যন্ত।  

ইয়াকুতায় শিক্ষার্থীরা -৪৬ ডিগ্রী সেলসিয়াসের উপরে তাপমাত্রা থাকাকালীন স্কুলে যেতে পারে না তবে এর নিচে থাকলে তারা স্কুল যেতে পারে। এখানকার মানুষ নিজেদের বাসায় একটা আলাদা রুম রাখেন যেখানে তারা খাবার সংরক্ষণ করে থাকেন, যে রুমটি তাদের প্রাকৃতিক ফ্রিজারের কাজ করে। এমনকি বাজার গুলোতেও মাছ কিংবা মাংস বাইরে সাজিয়ে রাখা হয় যেগুলো নষ্ট হয় না বরং ঠান্ডায় শক্ত হয়ে জমে থাকে। 

ইয়াকুতা শহরে বাইরে বের হলে শরিরের কোনো অঙ্গ ঢেকে না রাখলে সেটি কাজ করা বন্ধ করে দিতে পারে। যেমন আপনি হাত মোজা পরা ছাড়া ২০ সেকেন্ডের বেশি বাইরে হাত রাখতে পারবেন না আর যদি রাখেন তৎক্ষণাৎ আপনার হাত তার অভ্যন্তরীণ কাজ করা বন্ধ করে দিবে।

এখানকার মানুষ সাধারনত পশুর পশম দিয়ে তৈরি পোশাক গুলো ব্যবহার করে থাকেন যেটি অনেক ভারী হয়। এখান কার মানুষরা গাড়ি ব্যবহারেও সতর্ক থাকা লাগে কেননা যদি কোনোভাবে গাড়ির ইঞ্জিন ২০ মিনিট পর্যন্ত বন্ধ থাকে তাহলে সেটি জমে যাবে এবং গাড়িটি ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়বে। তবে ইয়াকুতা শহরের মানুষের ভাষা অনুযায়ী তারা এই পরিবেশে অভস্ত কেননা এই শহর অনেক নিরিবিলি, এখানে তেমন কোনো পরিবেশ দূষণ হয় না।

সাইবেরিয়ার এই শহরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা -৭১ ডিগ্রী সেলসিয়াস কিংবা তার একটু বেশিও হতে দেখা যায় কোনো কোনো বছর। ধারনা করা হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মান দের বিরুদ্ধে রাশিয়ার বিজয়ের প্রধান কারন এই ঠান্ডা আবহাওয়া।

তবে আমাদের দেশের মত নাতিশীতোষ্ণ কিংবা মধ্যপ্রাচ্যের মত গরম আবহাওয়ার দেশ গুলোর মানুষের এই অঞ্চলে টিকে থাকা আদৌ সম্ভব কিনা সে ব্যাপারে আপনার কি মনে হয়?

এরকম আরো অদ্ভুত ব্যাপার গুলো জানতে আমাদের বাকি ব্লগ গুলো পড়তেও ভুলবেন না।

আরো ব্লগ পড়তে এখানে ক্লিক করুন।

 

Writer:- 

Marjahan Akter

Intern at YSSE Content Writing Department  

YSSE

           

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *