পৃথিবীর  শক্তিশালী এবং অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ দেশগুলোর মধ্যে একটি হলো আমেরিকা। রিসার্চ, পড়াশুনা, জ্ঞানচর্চা, ভালো সুযোগ ও বেতনের চাকুরির জন্য সবচেয়ে ভালো দেশ এখন আমেরিকা। আর বিশ্বের সকল দেশের অনেক  মেধাবী  শিক্ষার্থী প্রতি বছর জড়ো হচ্ছে এই আমেরিকায় আর গড়ে তুলছে নিজেরদের ভবিষ্যৎ। বিশ্বে পরিশ্রমী ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য আমেরিকা তৈরী করেছে অপার সুযোগ ও নিশ্চিত ভবিষ্যৎ- আর এই শক্তিশালী মেধাবীরাই গড়ে তুলেছে উন্নত আমেরিকা।

আমেরিকান ডিগ্রীসমূহ:

সাধারণত ব্যাচেলর(অনার্স) ডিগ্রী, মাস্টার্স ডিগ্রী, ডক্টরেট ডিগ্রী এই তিন ধরনের ডিগ্রীর সম্পর্কে আমরা সবাই জানি এবং আমেরিকায় এ সকল ডিগ্রীতে স্কলারশিপের সুযোগ-সুবিধাও আছে। এই তিনটি কোর্স বা ডিগ্রী মূলত দুটি প্রোগ্রামের অন্তর্গত। ১।আন্ডারগ্রেজুয়েট প্রোগ্রাম ২।গ্রেজুয়েট প্রোগ্রাম। ব্যাচেলর ডিগ্রী মূলত আন্ডারগ্রেজুয়েট প্রোগ্রাম এর অন্তর্গত। আর মাস্টার্স এবং পিএইচডি প্রোগ্রাম মূলত গ্রেজুয়েট প্রোগ্রাম এর অন্তর্গত। সাধারণত পাঁচ থেকে ছয় লক্ষ টাকার মতো একজন শিক্ষার্থীর প্রতিমাসে সেমিস্টার ফি হয়ে থাকে। প্রতি সেমিস্টার ফি বিশ্ববিদ্যালয় ভেদে ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। তবে স্কলারশিপ পেলে আপনার ফি আরও কমে যায়।  আমেরিকায়  অনেক ভালো ভালো বিশ্ববিদ্যালয় আছে। এর মধ্যে সেরা কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় হলোঃ Massachusetts Institute of Technology (MIT), Stanford University, Harvard University, California Institute of Technology, University of Chicago. এই সব বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে বিভিন্ন  স্কলারশিপ চালু রয়েছে। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কিছু স্কলারশিপ হলোঃ Fulbright Scholarships, Stanford University Scholarships, Amherst College Scholarships, Clark University Scholarships, Michigan State University Scholarships, Berea College Scholarships ইত্যাদি।

ফান্ড বা স্কলারশিপ পাওয়ার উপায়:

ফান্ড বা স্কলারশিপ পেতে গেলে আপনাকে থিসিস বেসড মাস্টার্স নির্বাচন করে প্রফেসর খুঁজে নিয়ে তার আন্ডারে গবেষণা  করার জন্য যেতে হবে।  আপনাকে প্রফেসরদের খুঁজে তাদের গবেষণার  ক্ষেত্র  ভিত্তিক নিজের পোর্ট-ফোলিও সাজিয়ে তাকে মেইল করতে হবে এবং তাকে রাজি করাতে হবে। প্রফেসররা সাধারণত স্কাইপি অথবা অন্য কোন মাধ্যমে আপনার ইন্টারভিউ নিয়ে থাকে। 

আমেরিকায় প্রফেসররা  চাইলে আপনাকে সরাসরি এডমিশনও দিতে পারেন। প্রফেসর আপনাকে রিকমেন্ডেশন করলে, বিশ্ববিদ্যালয় অথরিটি আপনাকে ভর্তির বিষয়ে অনেক সহায়তা করে থাকে আর তখনই ফান্ডিং  পেতে আর কোন বাধা থাকে না। অনেক সময় প্রফেসর তার কাছে বরাদ্দ রিসার্চ ফান্ড থেকে আপনাকে RA (Research Assistant বা রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট) পোস্ট অফার করে থাকে অথবা আপনাকে TA (Teaching assistant  বা টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্ট) অফার করে কোর্স ফি দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেন। অন্যদিকে পিএইচডি মাত্রই রিসার্চ বেসড। তাই আপনার  যদি  রিসার্চ করার মন-মানসিকতা থাকে তাহলেই  আপনি পিএইচডি-তে এপ্লাই করবেন। আমেরিকায় গ্রেজুয়েট  লেভেলের শিক্ষার ক্ষেত্রে পিএইচডি আর মাস্টার্স দুইটি অপশন থাকে। 

যারা পিএইচডি করতে চান এবং সেটাতে  ভবিষ্যত ক্যারিয়ার করার প্ল্যান আছে, তারা অবশ্যই পিএইচডিতেই এপ্লাই করবেন। কিন্তু অনেকের ক্যারিয়ার প্ল্যানের সাথে মাস্টার্স ডিগ্রীটি সামঞ্জস্যপূর্ণ। কারণ:

১।মাস্টার্স শেষ করতে দেড়-দুই বছর লাগে

২।রিসার্চ একেবারেই লাগে না বা অল্প লাগে (যদি থিসিস করেন)

৩।মূলত কোর্সওয়ার্ক বেসড 

৪।অনেক সাবজেক্টের জবমার্কেটে একাডেমিক জব ও রিসার্চ জব বাদে বাকি অনেক ইন্ডাস্ট্রির জবে মাস্টার্সই যথেষ্ট।

কিন্তু  পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তির সাথে সাথে ফান্ডিং নানা ভাবে সহজে মিললেও মাস্টার্সে ফান্ডিং পাওয়াটা একটু কঠিন। কারণ নানা বিশ্ববিদ্যালয় পিএইচডি শিক্ষার্থীদেরকেই অগ্রাধিকার দেয় ফান্ডিং এর ক্ষেত্রে। তাহলে মাস্টার্স পর্যায়ে আপনি কিভাবে ফান্ডিং পাবেন তার কয়েকটি উপায় নিচে আলোচনা করা হলো :

  • খেয়াল করে অ্যাপ্লাই করা: অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে  মাস্টার্স প্রোগ্রাম আছে কিন্তু পিএইচডি প্রোগ্রাম নাই। তাই এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে  টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্ট(TA) বা ক্ষেত্রবিশেষে রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট(RA) পজিশনগুলো মাস্টার্স এর  শিক্ষার্থীরাই পেয়ে থাকে। একেবারে টপ র‍্যাঙ্ক  বিশ্ববিদ্যালয় এ পড়ার বাধ্যবাধকতা না থাকলে এসব বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে এপ্লাই করতে পারেন।
  • বড় বড় ডিপার্টমেন্ট এপ্লাই করা: টপ র‍্যাঙ্ক  অনেক বিশ্ববিদ্যালয় এর  ডিপার্টমেন্ট অনেক বড় হয়। প্রতি বছর হয়তো হাজার হাজার শিক্ষার্থী আসছে। সেক্ষেত্রে পিএইচডি স্টুডেন্ট ছাড়াও মাস্টার্সের স্টুডেন্টেরা নানা অ্যাসিস্ট্যান্টশিপ পেতে পারে।
  • প্রফেসরের কাছ থেকে ফান্ডিং পাওয়া: প্রফেসরদের ম্যানেজ করতে পারলে  পিএইচডির মতোই মাস্টার্সেও ফান্ডিং পাওয়া যায়। আপনার  প্রোফাইল দেখার পরে প্রফেসর যদি বেশি সন্তুষ্ট থাকেন, তাহলে ফান্ড পেতে পারেন। দেখা যায় যে, কোনো প্রজেক্টের কাজে জরুরি দরকার হলে অনেক সময়ে মাস্টার্সের শিক্ষার্থীদের কেও ফান্ড দেয়া হয়। কাজেই প্রফেসরেরা কেবল পিএইচডিতেই ফান্ড দেন, তা সব সময়ে ঠিক না,আপনি মাস্টার্সেও তা পেতে পারেন। তাই নিজের দক্ষতা বাড়ান এবং প্রফেসরদের সাথে আগে থেকে যোগাযোগ করুন।
  • ফুল ফান্ড না পেলেও অন্যান্য ফান্ড: তখন আপনি আপনার আপনার অ্যাপ্লাই করা বিশ্ববিদ্যালয় এ মাস্টার্সে ফুল ফান্ড পাবেন না তখন  গ্রেজুয়েট কোঅর্ডিনেটরের সাথে ইমেইলে যোগাযোগ করে অন্যান্য সুবিধা নিতে পারেন। যেমন: ৫০% টিউশন ওয়েইভার অথবা কোনো রকমের ফান্ডিং। 
  • গ্রেজুয়েট অ্যাসিস্ট্যান্টশিপ: একবার ক্যাম্পাসে এসে গেলে নানা রকমের কাজের সুযোগ পাওয়া সহজ হয়। অনেক মাস্টার্সের শিক্ষার্থীরাই অনেক সময়ে ঘণ্টা হিসাবে টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্ট, টিউটর, ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট, লাইব্রেরি/রিক্রিয়েশন সেন্টার এসব জায়গায় কাজ পেতে পারে। 
  • ইন্টার্নশিপ বা অফ ক্যাম্পাস জব: আপনি  পেইড ইন্টার্নশিপে গিয়েও সেই  অনেক ভালো অংকের বেতন জোগাড় করে তা দিয়ে মাস্টার্সের পড়ার খরচ যোগাতে পারবেন। তাছাড়া  অনুমতি নিয়ে ক্যাম্পাসের বাইরে প্রতি সপ্তাহে   সর্বোচ্চ ২০ ঘণ্টা  কাজ করার সুযোগ রয়েছে।

অনেক সময় যোগ্য ক্যান্ডিডেট তার  অ্যাপ্লিকেশনের সময়ে প্রফেসরের কাছে ফান্ডিং না থাকায় সুযোগ পায় না, আবার হয়তো পরের বছর একই প্রফেসর এর কাছে ওই ক্যান্ডিডেটের  চেয়ে একটু কম মানের প্রোফাইলের স্টুডেন্ট এপ্লাই করে ফান্ডিং থাকায় সেটা পেয়ে যায়। 

এরকম আরও ব্লগ পড়তে ক্লিক করুন। 

 

লেখিকা

মেহরীন খান

ইন্টার্ন, কনটেন্ট রাইটিং ডিপার্টমেন্ট 

YSSE

 

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *