বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিল আপডেট

বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিল

আলোচনায় সুপারিশ

• দুই বছরের কোর্স করা কমিউনিটি প্যারামেডিকদের কমিউনিটি ক্লিনিকে স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে

• কমিউনিটি ক্লিনিকে প্যারামেডিকদের নিয়োগের জন্য নিয়োগবিধিতে কিছুটা পরিবর্তন আনা দরকার

• কমিউনিটি প্যারামেডিকদের রেফারেল যেন চিকিৎসকেরা মূল্যায়ন করেন, সেটি নিশ্চিত করা প্রয়োজন

• প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্যারামেডিকেরা যেন নিজ উদ্যোগে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের ব্যবস্থা করতে পারেন, সে জন্য সরকারি-বেসরকারি সহায়তা দরকার

• কমিউনিটি প্যারামেডিকদের পাঠ্যক্রমের সংশোধন বর্তমানে চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে

আলোচনা

আব্দুল কাইয়ুম:

আমাদের স্বাস্থ্য খাতে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। বিশেষ করে মাতৃ ও শিশুস্বাস্থে্যর ক্ষেত্রে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা সফলভাবে অর্জন করেছি এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।

টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অনুসারে মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা কীভাবে সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া যায় আর সে ক্ষেত্রে কমিউনিটি প্যারামেডিকদের আমরা কীভাবে কাজে লাগাতে পারি, সেই বিষয়গুলো নিয়ে আজ আলোচনা করব।




আবুল ফজল মো. এহসানুল হক

আবুল ফজল মো. এহসানুল হক


গত এক দশকে স্বাস্থ্য খাতে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে।

গড় আয়ু বৃদ্ধি, মাতৃমৃত্যুর হার হ্রাস, শিশুমৃত্যুর হার হ্রাসের মতো বড় অর্জন বাংলাদেশের রয়েছে। কিন্তু এই সাফল্যের মধ্যেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখনো পিছিয়ে আছে। সারা বিশ্বে যত মাতৃমৃত্যু হয়, তার ২ শতাংশ বাংলাদেশে হয় এবং বাংলাদেশে যত শিশু জন্মগ্রহণ করে, তার ৫০ শতাংশ এখনো অদক্ষ দাইয়ের হাতে হয়ে থাকে।
এর মূল কারণ হচ্ছে বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে যথেষ্ট পরিমাণে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর এখনো অভাব। গ্রামাঞ্চলের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশ সরকার বেশ কিছু যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ২০০৯ সালে প্রণীত কমিউনিটি প্যারামেডিক নীতিমালা এর মধ্যে অন্যতম।
এই নীতিমালায় বলা হয়েছে, শিক্ষার্থীরা এসএসসি পাস করার পর দুই বছর মেয়াদি কমিউনিটি প্যারামেডিক কোর্সে অংশগ্রহণ করতে পারবেন এবং দুই বছরের পূর্ণাঙ্গ এই কোর্স সম্পন্ন করার পর তঁারা প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা দিতে পারবেন। বাংলাদেশ নার্সিং অ্যান্ড মিডওয়াইফারি কাউন্সিল এই কোর্সের সার্বিক তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে রয়েছে। তাদের তত্ত্বাবধানে সারা দেশে মোট ২৩টি ইনস্টিটিউট ২০১১ সাল থেকে এই কোর্স পরিচালনা করা শুরু করে।
২০১১–১৫ সাল পর্যন্ত সুইসকন্ট্যাক্টের টারসান প্রকল্প কমিউনিটি প্যারামেডিক নামক স্বাস্থ্যসেবকদের প্রতিষ্ঠাকরণ এবং তাদের নীতিমালা বাস্তবায়নের জন্য কাজ করেছে। টারসান প্রকল্পের ধারাবহিকতায়, নোভারটিস গ্লোবাল ও সুইসকন্ট্যাক্টের আর্থিক সহায়তায় ‘আস্থা’ প্রকল্পের মাধ্যমে ২০১৫ সাল থেকে আমরা কমিউনিটি প্যারামেডিকদের প্রতিষ্ঠিতকরণ, সেবার মানোন্নয়ন ও স্বাস্থ্যসেবায় তাদের মূলধারায় সম্পৃক্তকরণের জন্য কাজ করছি। বর্তমানে বাংলাদেশের তিনটি জেলা—নীলফামারী, পটুয়াখালী ও সুনামগঞ্জে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে।

দুই বছরের কোর্সের পর কমিউনিটি প্যারামেডিকরা  প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা, সাধারণ রোগের চিকিৎসা, পরিবার পরিকল্পনা সেবা, গর্ভকালীন সেবা, প্রসবকালীন ও প্রসবোত্তর সেবা এবং নবজাতকের স্বাস্থ্যসেবার কাজ দক্ষতার সঙ্গে করতে পারে।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো, এই কমিউনিটি প্যারামেডিকরা রোগীর

অবস্থা পর্যবেক্ষণের পর তাদের সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার পরামর্শ প্রদান (রেফার) করতে সক্ষম।

এই কমিউনিটি প্যারামেডিকদের সরকার পরিবার পরিকল্পনা ও নবজাতকের

স্বাস্থ্যসেবা প্রদানসহ দেশের কমিউনিটি ক্লিনিকে নিয়োগ দিতে পারে। যেহেতু তঁাদের দুই বছরের কোর্স করা রয়েছে, ফলে তঁাদের অতিরিক্ত কোনো প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হবে না। ফলে দক্ষ নার্সের যে সংকট রয়েছে, সেটি দূর হবে এবং সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে, সেটি পূরণেও এটি সহায়ক হবে।

Comments

Popular posts from this blog

Theme HTML Code