ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৩ মে ২০২৪, ৩০ বৈশাখ ১৪৩১

নদীর সংখ্যা

প্রকাশিত: ১৯:৫৯, ২৭ আগস্ট ২০২৩

নদীর সংখ্যা

.

দেশে নদ-নদীর সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক চলে আসছে দীর্ঘদিন থেকে। সঠিক সংখ্যা কত তা জানে না কোনো সরকারি-বেসরকারি সংস্থা। কেননা, নদ-নদীর সঠিক সংখ্যা নিরূপণের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো প্রতিষ্ঠান নেই। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট এক রায়ে বলেছে, নদীর সঠিক সংখ্যা ঠিক করার দায়িত্ব জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের। সারাদেশের নদ-নদীর অভিভাবক তারা। সেক্ষেত্রে নদীর সঠিক সংখ্যা নির্ধারণের দায়িত্বও তাদের। এই রায়ে আদালত সব নদীকে জীবন্ত সত্তা হিসেবে অভিহিত করে বলেছে, কোনো নদ-নদী অবৈধ দখল দূষিত করা যাবে না কোনো অবস্থাতেই।

জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন ২৫ আগস্ট তাদের ওয়েবসাইটে হালনাগাদ তথ্য-পরিসংখ্যান উপস্থাপন করে বলেছে, সংখ্যাটি হবে ৯০৫। আর দেশের দীর্ঘতম নদী ইছামতি। কমিশন বলেছে, তালিকায় থাকা নদীগুলো জীবন্ত অর্থাৎ, মরে যায়নি। তবে সঠিক সংখ্যা নিয়ে তারাও নিশ্চিত নয়। কমিশন বলেছে, দেশে কতটি নদ-নদী আছে তার কোনো প্রামাণ্য দলিল নেই। অন্যদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড ২০১১ সালে এক প্রকাশনায় উল্লেখ করে যে, দেশে নদ-নদীর সংখ্যা ৪০৫। এই দুটি সরকারি সংস্থার ব্যাপক গরমিল নিয়েই দেখা দেয় বিতর্ক বিভ্রান্তি, যার নিরসন দূরঅস্ত। বিষয়ে দেশের বিশিষ্ট নদী বিশেষজ্ঞ এবং আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পরিবেশ বিজ্ঞানী . আইনুন নিশাত বলেন, আগে নদীর সঠিক যথার্থ সংজ্ঞা নির্ধারণ করা আবশ্যক। কেননা, বরিশাল এলাকায় যেটি খাল উত্তরবঙ্গে তা নদীর সমান। পার্বত্য অঞ্চল, চট্টগ্রাম সিলেটে অনেক ছড়া আছে, যেগুলোতে বর্ষাকালে পানি থাকে। অন্যসময় সেসব শুকিয়ে যায়। এগুলোর মধ্যে কোন্্টিকে নদী বলা হবে, আর কোন্্টিকে নয়, তা আগে নির্ধারণ করতে হবে সর্বসম্মত উপায়ে। তা না হলে ভুল বিভ্রান্তি থেকেই যাবে।

জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনও বলেছে, নদীর সংজ্ঞা নির্ধারণে তারা কাজ করছে। এটি আইনের মাধ্যমে নির্ধারণ করা দরকার। তবে দখল-দূষণে ইতোমধ্যে কত নদ-নদী মরে গেছে বা হারিয়ে গেছে সেই তথ্যও নেই কারও কাছে।

নদীর সর্বাঙ্গীণ অবস্থা, নাব্যাবস্থা, জীববৈচিত্র্য, জলজউদ্ভিদ, মৎস্যসম্পদ, বাস্তুসংস্থান, নদীভাঙন, নদীদখল, নদীদূষণ ইত্যাদির  ভয়াবহ সব তথ্য-উপাত্ত উঠে এসেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিভাগ আয়োজিত সেমিনারে।বাংলাদেশের হাওড়, নদী বিল: সমস্যা প্রতিকারশীর্ষক সেমিনারটি আয়োজন করে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন এবং বাংলাদেশ পরিবেশ নেটওয়ার্ক। প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশে এক হাজার ৭৪০টি নদীর অস্তিত্ব ছিল। নদী রক্ষা কমিশনের হিসাবে বর্তমানে ৭২০টি নদীর অস্তিত্ব রয়েছে, যেগুলো দখল-দূষণে জর্জরিত, মৃতবৎ। অর্থাৎ গত ৫০ বছরে হারিয়ে গেছে ৫০০ নদী। সমূহ হুমকির মুখে রয়েছে হাওড় অঞ্চলও। দখল-দূষণ ভাঙনের কারণে জীবিকা হারিয়ে প্রতিবছর বাস্তুচ্যুত অভিবাসী হচ্ছে পাঁচ লাখ মানুষ- যারা প্রবেশ করছে ঢাকা অন্যান্য শহরে। চরাঞ্চলে বসবাসরত কোটি মানুষের জীবন-জীবিকাও হুমকির সম্মুখীন। অপরিকল্পিত বাঁধ উড়াল সড়ক নির্মাণের ফলে হুমকির মুখে পড়েছে হাওড় অঞ্চলও। ফলে, মৎস্য সম্পদের পরিমাণ কমে যাচ্ছে।

প্রকৃতি পরিবেশ হচ্ছে বিপন্ন। তবে আশার কথা এই যে, নদী রক্ষা কমিশন গত কয়েক বছর ধরে দেশের নদ-নদীগুলো রক্ষায় কঠোর অবস্থান গ্রহণসহ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করছে নিয়মিত। ২০১৯ সালের শেষ দিকে ১৮ হাজার ৫৭৯ জন বা ৩২ শতাংশ অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করা হয়। দুঃখজনক হলো, উচ্ছেদের কিছুদিন পরেই আবার তা দখল হয়ে যায়।

×